ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামাজিক সংগঠন সমাজের জন্য জাগরণ, সজজা ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে 'মাধ্যম' নামে একটি কর্মসূচি চালু করে। তখন এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের টিউশনি বা খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া। প্রাথমিক চেষ্টায় ১২ জন শিক্ষার্থীকে টিউশনির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু টিউশনি সংগ্রহ করা খুবই কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার ছিল। তদুপরি অভিভাবকদের চাহিদা অনুযায়ী টিউটর দিতে গেলে কেবল দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপযুক্ত টিউটর পাওয়া যেত না। ফলে পরবর্তীতে উক্ত কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন করে প্রতিবছর কিছু দরিদ্র শিক্ষার্থীকে সারাবছরের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিয়ে সহায়তা করা হত।

২০১৯ সালে সজজা'র স্থায়ী পরিষদের সদস্যগণ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার জন্য শিক্ষা সহায়তা তহবিল গঠন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশি পণ্য বিপণনের জন্য দেশজ বিপণী নামে একটি কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

দেশজ বিপণী'র উদ্দেশ্য-
মানসম্পন্ন দেশি পণ্য বিপণন
দেশি পণ্য ব্যবহারে সবাইকে উদ্বুদ্ধকরণ
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সহায়তা তহবিল গঠন

ভেজাল, মানহীন আর তথাকথিত বিদেশি পণ্যে সয়লাব বাজার। বিশ্বাসের বহুল প্রচলিত সব বুলি আউড়িয়ে ভোক্তাদের কাছে টেনে বিশ্বাসঘাতকতার দৈনন্দিন ঘটনা আমাদের সকল বিশ্বাসকে করেছে সন্দেহপ্রবণ। তাই পণ্য কেনাবেচায় মানুষ আর কারো উপরই আস্থা রাখতে পারছে না। আস্থার চরম সংকটময় মুহূর্তে দেশ ও দশের জন্য মানসম্পন্ন পণ্যের নিশ্চয়তা নিয়ে একটি মানবিক কার্যক্রম দেশজ বিপণী।

আকাশ সংস্কৃতির দয়ায় চিত্তাকর্ষক বিজ্ঞাপনে আমাদের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে বহুজাতিক সব বিদেশি প্রতিষ্ঠান। আমাদের দেশিয় অনেক সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যবাহী পণ্য মলিন হয়ে যাচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানের করাল গ্রাসে। মুখরোচক, অতিরঞ্জিত সব বিজ্ঞাপনে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বৈকল্য এতই চরম পর্যায়ে চলে গেছে যে বিদেশি পণ্য বলতেই অন্ধ! আমাদের দেশে এখন অনেক মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু বড় মূলধনের অভাবে তারা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় থাকতে পারছে না। ফলে বিদেশি কোম্পানিগুলো আরো শক্তিশালী হচ্ছে, আর দেশীয় উদ্যোগগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে, আত্মনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত হতে, দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে দেশি পণ্য ব্যবহারের বিকল্প নেই। আমরা বিদেশি পণ্য বর্জনের কথা বলছি না, বরং আমরা মান নিশ্চিত করে উৎপাদিত হওয়া দেশি পণ্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলছি। আমরা সবাইকে দেশপ্রেমের তাড়না থেকে মানসম্পন্ন দেশি পণ্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কেবল বাংলাদেশে উৎপাদিত খাঁটি পণ্যের নিশ্চয়তা নিয়ে এগিয়ে যাবে দেশজ বিপণী।

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশজ বিপণীর বিপণন কার্যক্রমে নিযুক্ত করা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থীকে।

দেশজ বিপণীর লভ্যাংশ দিয়ে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য 'শিক্ষা সহায়তা তহবিল' গঠিত হবে যা সজজা'র তত্বাবধানে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যয় করা হবে। কেউ আগ্রহী হলে 'শিক্ষা সহায়তা তহবিল' এ সরাসরিও দান করতে পারেন।

আসুন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশজ বিপণী থেকে পণ্য কিনে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা করি, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করি এবং নিশ্চিন্তে মানসম্পন্ন ও খাঁটি দেশি পণ্য গ্রহণ করি।

দেশ ও দশের জন্য
দেশপ্রেমে হোক খাঁটি পণ্য